গর্ভাবস্থায় কয়েকটি ভুল ধারণ, সঠিক তথ্য জেনে থাকুন সুস্থ!
গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই একজন নারীর আশে পাশের পরিচিত লোকজন বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এটা করবে না, ওইটা করবে না, এটা খাবে না, ওইটা খাবে না, এটা ব্যবহার করলে সন্তানের জন্য খুব খারাপ এরকম আরো কত যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু সব কিছুই কি আসলে মেনে চলাটা খুব জরুরী? কিছু ভুল ধারণাও তো থাকতে পারে। আসুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় ১০টি ভুল ধারণা নিয়ে বিস্তারিত।
পেজ সূচিপত্র:
১: ফ্লু ভ্যাক্সিন (Flu vaccine) নেওয়া যাবে কী?
ভুল ধারণা: অনেকেই ভয় পান এটা ভেবে যে এর কারণে গর্ভে থাকা শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন হয়ত তার শিশুর কিছু হবে না কিন্তু তিনি নিজে ফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারেন।
সঠিক ধারণা: প্রেগনেন্সিতে নারীর Immune System কিছুটা পরিবর্তন আসে। এসময় একজন গর্ভবতী নারীর ফ্লু হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, যার কারণে এ অবস্থায় ফ্লু ভ্যাক্সিনেশন মা এবং মায়ের গর্ভে থাকা শিশুর জন্য খুবই জরুরি।
২: একজন গর্ভবতী একদিনে কতটুকু খাবার খেতে পারবে?
ভুল ধারণা: দুই জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করে তত পরিমাণ খাদ্য একজন গর্ভবতী খেতে পারবে।
সঠিক ধারণা: যদি একজন গর্ভবতী নারীর ওজন গর্ভধারণের আগে স্বাভাবিক থেকে থাকে তাহলে শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য তাকে আগের তুলনায় প্রতিদিন অতিরিক্ত ৩০০ বা ৩৫০ ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকদের মতে একজন নারীর গর্ভাবস্থার আগে যদি ওভার ওয়েট না হয়ে থাকে তাহলে গর্ভাবস্থায় তার ওজন ২৫ থেকে ৩০ পাউন্ড বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু এর বেশি নয়। কারণ শিশুর জন্মের পর মায়ের অতিরিক্ত ওজন কমাতে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। যদি ওজন ৫০ পাউন্ডের এর বেশি বৃদ্ধি পায় তাহলে সেক্ষেত্রে শিশু জন্মের সময় কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে আর জন্মের সময় যেসব শিশু অতিরিক্ত ওজনের (Weight) হয়ে থাকে তাদের বড় হওয়ার পরে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
৩: হেয়ার ড্রাই ব্যাবহার করা যাবে কি প্রেগনেন্সির সময়?
ভুল ধারণা: হেয়ার ডাই (hair dye) ব্যবহার করালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
সঠিক ধারণা: হেয়ার ডাই এর মধ্যে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় সেগুলোর সামান্য অংশ আমাদের ত্বক শোষণ করে নেয়, যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে কেমিক্যালের কড়া গন্ধে হয়তো একজন গর্ভবতী নারী অস্বস্তি বোধ করতে পারেন তাই এরকম সময়ে এমন জায়গায় হেয়ার ডাই এর জন্য যেতে হবে যেখানে ভেন্টিলেশন (ventilation) ব্যবস্থা ভালো আছে। তারপরেও যদি আপনার দুশ্চিন্তা থাকে এ ব্যাপারে তাহলে অ্যামোনিয়া আছে এমন ডাই এড়িয়ে চলতে পারেন। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গর্ভধারণের পর আপনার চুলের হয়তো সহনশীলতায় পরিবর্তন আসতে পারে। গর্ভধারণের আগে যেই প্রোডাক্ট আপনার চুলে ভালো কাজ করত সেই একই প্রোডাক্ট গর্ভধারণের পর কাজ নাও করতে পারে তাই সে গুলো এড়িয়ে চলবেন।
৪: গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন গ্রহণ করা যাবে কি?
ভুল তথ্যঃ গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন গ্রহণ করা একদম বন্ধ করতে হবে, কারন এটি গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
সঠিক তথ্যঃ গবেষোণায় দেখা গিয়েছে যে, একজন গর্ভবতী নারী যদি ২০০ মিলিগ্রামের কম কফি পান করেন সেক্ষেত্রে তার গর্ভপাত আর লো বার্থ ওয়েট (low birth weight) এর কোন ঝুঁকি থাকবে না।
৫: গর্ভাবস্থায় বডি স্ক্যানার ব্যাবহার করা যাবে কি?
ভুল ধারণা: বডি স্ক্যানার থেকে দূরে থাকুন। এতে গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
সঠিক ধারণা: বিভিন্ন জায়গায় প্রবেশ করার আগে আজকাল বডি স্ক্যানার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই কারণ এয়ারপোর্ট বডি স্ক্যানার (Airport body scanner), সিকিউরিটি এক্স-রে মেশিন এগুলোর সামান্য রেডিয়েশন (radiation) একজন গর্ভবতীর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে যেসব নারীর গর্ভধারণের পরবর্তী সময়ে ফুসফুস অথবা হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয় তারা সাধারণত ৩০,০০০ ফুট উপরে অস্বস্তিতে পড়তে পারেন। তাই প্লেনে যাত্রা করার আগে তাদের চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৬: গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া যাবে কি?
ভুল ধারণা: গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া যাবে না। এতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
সঠিক ধারণা: সপ্তাহে ২ বার মাছ খেতে পারলে ভালো কারণ মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আছে যা গর্ভে থাকা শিশুর ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট আর দৃষ্টি শক্তির জন্য অত্যন্ত জরুরি। তবে অবশ্যই রান্না করা মাছ খেতে হবে।
আমাদের দেশে এখন কিছু জায়গায় সুসি (sushi) অথবা সাশিমি (sashimi) পাওয়া যায়, বিশেষ করে কোন ফুড ফেস্টিভাল হলে, কোরিয়ান খাবারের দোকানগুলোতে বা ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতে। এগুলো এক ধরনের জাপানীজ খাবার যেটাতে মাছ কিছুটা কাঁচা অবস্থায় থাকে। কাঁচা মাছে ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাব না রয়েছে যা গর্ভবতী নারী ও তার গর্ভে থাকা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। তবে রান্না করা সুসি খাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন দোকানে টুনা (tuna) মাছ পাওয়া যায় যা ক্যানের ভেতর প্রস্তুত করে রাখা থাকে। সেগুলো খেতে পারেন।
৭: গর্ভবতী নারী কয়টাস করতে পারবে কি?
ভুল ধারণা: গর্ভাবস্থায় নারী কয়টাস (coitus) করতে পারবে না।
সঠিক ধারণা: গর্ভবতী নারী কয়টাস করতে পারবে। কারণ এর ফলে গর্ভে থাকা শিশুর শারীরিক কোন ক্ষতি হবে না। শিশু অ্যামনিওটিক স্যাক এবং স্ট্রং ইউটেরাইন মাসল এর মাধ্যমে তার মায়ের গর্ভে সুরক্ষিত থাকে। তবে সেক্সচুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সন্তানের মা ও বাবা ২ জনকেই সাবধান থাকতে হবে। কারণ গর্ভবতী নারী যদি হার্পিস, জেনিটাল ওয়ার্ট, এইচআইভি (HIV)। দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে তার কাছ থেকে তার গর্ভে থাকা শিশুর মাঝেও রোগ ছড়াতে পারে। তবে এ ব্যাপারে বেশি দুশ্চিন্তা হলে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে যে coitus এ involve হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে কিনা।
৮: গর্ভাবস্থায় কোন দিকে ফিরে ঘুমানো উচিত?
ভুল ধারণা: এ অবস্থায় সব সময় বা দিকে কাঁত হয়ে শুতে হবে।
সঠিক ধারণা: যেদিকে বা যেভাবে শুয়ে আরাম বোধ হয় সেভাবে শুতে হবে।
গর্ভাবস্থায় সহবাস করা যাবে কী
আপনার গর্ভাবস্থা যদি স্বাভাবিক হয়ে থাকে, আপনার যদি কোন শারীরিক জটিলতার সমস্যা না থাকে এবং ডাক্তার যদি সহবাস থেকে বিরত থাকার পরামর্শ না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য গর্ভাবস্থায় সহবাস করা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত। এতে গর্ভের সন্তানের কোন ধরনের আঘাত পাওয়ার অথবা ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
গর্ভাবস্থায় আপনার বাচ্চা কোন পাশে থাকে সেটা বিস্তারিত ভাবে বলা যায় না। গর্ভের শিশুর জন্য সবচেয়ে সাধারণ এবং অনুকূল অবস্থান হল মাথার অবস্থান, যা সিফালিক উপস্থাপনা নামেও পরিচিত। এই অবস্থানে, শিশুর মাথা যোনির দিকে অবস্থান করে এবং শিশুর পিঠ সাধারণত মায়ের পেটের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। এই অবস্থাটি নরমাল ডেলিভারীর জন্য একটি সর্বোত্তম এবং সহজ বাচ্চা প্রসব করা যায়।
গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন
গর্ভাবস্থায় ইউটেরাসের হাড়গুলো প্রসারণের কারণে মূলত তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে। ভ্রূণ যত বৃদ্ধি পাবে পেটে তত ইউটেরাসের আভ্যন্তরীণ পর্দায় চাপ সৃষ্টি হতে থাকে, যার ফলে তলপেটে ব্যাথা হয়ে থাকে। আপনার যদি এই ধরণের ব্যাথা হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ
মায়ের মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখলে বুঝা যায় ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। আমরা এই মূহুর্তে জানবো ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষন সমূহঃ-
গর্ভাবস্থায় যদি নারী্দের চুলের সৌন্দর্যতা বা উজ্জ্বল্যতা বেড়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটি ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ।
গর্ভাবস্থায় যদি একজন মায়ের চেহারার সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি কমে যাবে, তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি ছেলে সন্তান হওয়ার পূর্বলক্ষণ
গর্ভাবস্থায় যদি মায়েদের টক বা ঝাল জাতীয় খাবারের প্রতি বেশি আগ্রহ থাকে, তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি ছেলে সন্তান হওয়ার পূর্বলক্ষণ
পেটে ছেলে সন্তান থাকলে গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে এবং পেট অতিরিক্ত মাত্রায় ফোলা হয়ে থাকে।
পায়ের পাতা ঠাণ্ডা হয়ে আসলে বুঝে নিতে হবে ছেলে সন্তান হবে।
গর্ভাবস্তায় যদি বাচ্চার হার্ট রেট ১৪০ বিট/ প্রতি মিনিট রয়েছে, তাহলে ধরে নেওয়া হয় ছেলে সন্তান হবে।
এই গুলো ছাড়াও আপনি ডাক্তার এর সাহায্যে আল্ট্রা করে দেখে নিতে পারেন আপনার ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। উপরে উল্ল্যেখিত লক্ষন গুলো শুধুমাত্র অনুমান এর ভিত্তিতে ধরে থাকে।
মেয়ে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ
গর্ভাবস্থায় যদি নারী্দের চুলের সৌন্দর্যতা বা উজ্জ্বল্যতা হারিয়ে যায় অথবা গর্ভবতী নারীদের চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটি কন্যা সন্তান হওয়ার লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় যদি একজন মায়ের চেহারার সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি পায়, তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি কন্যা সন্তান হওয়ার পূর্বলক্ষণ
গর্ভাবস্থায় যদি মায়েদের মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি বেশি আগ্রহ থাকে, তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি কন্যা সন্তান হওয়ার পূর্বলক্ষণ
গর্ভাবস্থায় যদি কোন নারীর বেশি অলসতা ভাব আসে, তাহলে বুঝে নিতে হবে টি কন্যা সন্তান হওয়ার পূর্বলক্ষণ
এই গুলো ছাড়াও আপনি ডাক্তার এর সাহায্যে আল্ট্রা করে দেখে নিতে পারেন আপনার ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। উপরে উল্ল্যেখিত লক্ষন গুলো শুধুমাত্র অনুমান এর ভিত্তিতে ধরে থাকে
আমাদের শেষ কথা
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছি গর্ভাবস্থায় কয়েকটি ভুল ধারণা সম্পর্কে। আরো শেয়ার করেছি গর্ভাবস্থায় সহবাস করা যাবে কী, গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে, গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন , ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ, মেয়ে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ এই বিষয় গুলো নিয়ে। আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন।
রায়হান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url