অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম ২০২৪
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। গরিব ঘরের সন্তানরা চাইলেও তাদের পড়াশুনার খরচ চালাতে পারে না। তাদের মা-বাবা তাদের পড়ালেখার খরচ বহন করতে না পারার কারণে অনেক ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা করা সম্ভব হয় না। তাই বাংলাদেশের সরকার দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করেছে উপবৃত্তি। যারা উপবৃত্তি নিতে আগ্রহী তারা অবশ্যই শিক্ষার্থী হতে হবে। উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয় অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম ২০২৪।
বাংলাদেশের একটি বিশাল অংশ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে থাকে। যার কারণে অর্থের অভাবে তাদের ছেলে মেয়ের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে না। তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারে না। টাকার জন্য যেন কোন ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশুনা বন্ধ না হয়ে যায়, এই বিষয়কে মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার দরিদ্র এবং মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি চালু করেছে। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যেতে পারে।
উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে গেলে আগে অনেক ঝামেলাই পড়তে হতো। তবে বর্তমানে অনলাইন এর মাধ্যমে উপবৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়। এতে করে মানুষের সময় এবং ঝামেলা দুইটাই কমে গেছে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানবো অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে।
উপবৃত্তি কী?
যারা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল বা দারিদ্র্য সেসব শিক্ষার্থীদের মাঝে সরকার থেকে যে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়ে থাকে, তাকে উপবৃত্তি বলা হয়। অনেকের পরাশুনার ইচ্ছা থাকলে যতেষ্ট পরিমানে টাকা পয়সা না থাকার কারণে তারা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে না। সেসব শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কতৃক উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা এই উপবৃত্তির টাকা গুলো দিয়ে যেন লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকার উপবৃত্তি চালু করার মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে উপবৃত্তি কর্মসূচীর একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে।
অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম
বাংলাদেশের প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুল-কলেজের উপবৃত্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। প্রকাশ করা হয় উপবৃত্তির ওয়েবসাইট এর মধ্যে যার নাম মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সরকারি ভাবে উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
উপবৃত্তির জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। সাথে কোন কোন প্রতিষ্ঠান গুলো উপবৃত্তির আওতায় পড়বে সেটাও প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
উপবৃত্তির জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া কোন শিক্ষার্থীর জানা থাকলে সে সহজে আবেদন করতে পারবে। আবেদন করার জন্য অন্য কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
অনলাইনে উপবৃত্তির জন্য আবেদন করা শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তথ্য যাচাই বাছাই করা হবে। যাচাই বাছাই সম্পূর্ন হওয়ার পর সে তথ্য গুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (PMEAT) এর ওয়েবসাইটে পাঠিয়ে দেয়া হবে। যে যে শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য সিলেক্ট হবে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। উপবৃত্তির বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে আবেদন সহ সকল যাবতীয় নির্দেশনা এই সাইটের মাধ্যমে পেয়ে যাবে, সাইটের লিংক হলো www.pmeat.gov.bd
অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদনের নিয়মাবলী
শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে অনলাইনে উপবৃত্তির জন্য আবেদন করার কিছু নিয়ম দেওয়া হয়ে থাকে, যেগুলো না মানলে উপবৃত্তির আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
চলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়মাবলী সম্পর্কে।
- ছবি: শিক্ষার্থীদের সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি দেওয়া লাগবে
- স্বাক্ষর: এরপর প্রয়োজন হবে শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে পরবর্তীতে সে স্বাক্ষর দিতে পারে। স্বাক্ষর অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: যে শিক্ষার্থী অনলাইনে উপবৃত্তির জন্য আবেদন করবে সে কোন ক্লাসে পড়ের সেটা উল্ল্যেখ করতে হবে।
- জন্মসনদ: শিক্ষার্থীদের জন্মসনদ এর প্রয়োজন হবে। জন্মসনদের ১৭ ডিজিটের নাম্বারটির প্রয়োজন হবে এবং আবেদন পত্রে উল্ল্যেখ করতে হবে।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশপত্র: যে শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য আবেদন করবে সে কি আসলেই দরিদ্র কিনা অর্থাৎ সে শিক্ষার্তী উপবৃত্তির জন্য যোগ্য কিনা সেটার প্রমাণ-স্বরুপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি সুপারিশপত্র লাগবে।
- অভিভাবক প্রত্যয়ন পত্র: শিক্ষার্থীর বাবা অথবা মা যদি সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় অথবা চতুর্থ পদে কর্মরত থাকে তাহলে সে প্রতিষ্ঠান কতৃক প্রত্যয়ন পত্র এর প্রয়োজন হবে।
- অভিবাবকের জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার: শিক্ষার্থীর বাবা এবং মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার এর প্রয়োজন হবে। আবেদন ফরম পূরণ করার সময় উল্ল্যেখ করতে হবে।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর: উপবৃত্তির টাকা গ্রহন করার জন্য একটি বৈধ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রয়োজন হবে। মোবাইল ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত বিকাশ বা নগদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার শিক্ষার্থীরা চাইলে পিতা এবং মাতার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বারও যুক্ত করতে পারবে। সেক্ষেত্রে পিতা অথবা মাতার নিজ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থাকতে হবে।
উপরে উল্ল্যেখিত সব কিছু আবেদন পত্রে উল্ল্যেখ করতে হবে। ফরম পুরণ করার পর সে ফরম টি স্কুল বা কলেজের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। এরপর যাচাই বাছাই এর মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়া হবে। অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে ০১ টা মোবাইল নাম্বার দিয়ে শুধু মাত্র একজন শিক্ষার্থীর জন্য আবেদন করা যাব
উপবৃত্তি আবেদন অনলাইন ফরম
দারিদ্র্য এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি উপবৃত্তির জন্য আবেদন করার সময় নিচের কিছু নিয়ম অনুসরন করুন।
- প্রথমে শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে উপবৃত্তির আবেদন ফরম ডাউনলোদ করুন।
- করা আবেদন ফরমটি প্রিন্ট করুন
- আবেদন ফরম টি ০৪ পাতার থাকবে। সঠিক তথ্য দিয়ে পূরন করুন
- আপনার ফরম পূরণ করা শেষ হলে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে আসুন। এরপর অপেক্ষা করুন তালিকা প্রকাশের সময় পর্যন্ত।
- এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ফরম গুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকিট জমা করে দিবে।
যেসব শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আবেদন করতে পারবে
আমাদের আর্টিকেলের এই পর্যায়ে আমরা জানবো যেসব শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে তাদের সে সম্পর্কে। বাংলাদেশ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই করার পরে তালিকা প্রকাশ করা হবে। আবেদন করার সময় কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে। যেগুলো এদিক সেদিক হলে কোন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য সিলেক্ট হবে না। উপবৃত্তির জন্য স্কুল অথবা কলেজের ষষ্ঠ এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই শুধুমাত্র আবেদন করতে পারবে। আবেদন করার সময় যে যে জিনিস দেখা হয় সেগুলো নিচে উল্ল্যেখ করা হলো:
- শুরুতে আবেদনকারীর অভিভাবকের বাৎসরিক ইনকাম দেখা হয়ে থাকে। যদি বাৎসরিক ইনকাম ১ লক্ষ টাকার কম হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষত্রে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অন্যথায় বাতিল হবে।
- আবেদনকারীর মা-বাবার মোট সম্পত্তির পরিমাণ দেখা হয়। যদি মেট্রোপলিটন এলাকায় জায়গার পরিমান ০.০৫ শতাংশ হয় অথবা মেট্রোপলিটন এর বাহিরে ০.৭৫ শতাংশ হলে অথবা এর নিচে থাকলে সে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে।
- আবেদনকারী যদি কোন সরকারী উপবৃত্তি আগে থেকে পেয়ে থাকে অথবা অভিভাবক যদি সরকারি কোন ভাতা পেয়ে থাকে তাহলে সে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
- কোন আবেদনকারী যদি পঞ্চম শ্রেণী অথবা অষ্টম শ্রেণীতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক সরকারি বৃত্তি ট্যালেন্টপুল অথবা সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে তাহলে সে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
সরকারি উপবৃত্তির জন্য সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বাচন করা হয়ে থাকে। কারণ সেসব এলাকা গুলোতে দরিদ্র শিক্ষার্থীর পরিমান বেশি হয়ে থাকে। কোন আবেদনকারী উপবৃত্তির জন্য বিবেচিত হয়েছে কিনা সেটা ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে জানতে পারবে। বিবেচিত হলে মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। সে শিক্ষার্থীকে আর সে প্রতিষ্ঠানে বেতন দিতে হবে না। তার পড়ালেখার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করবে।
উপবৃত্তির অর্থের পরিমাণ
বাংলাদেশ সরকার কতৃক ২০১২ সালে উপবৃত্তি চালু করা হয়েছে। তখন প্রথম অবস্থায় প্রাইমারি লেভেলের শিক্ষার্থীর জন্য ১৫০ টাকা করে বরাদ্দ ছিলো। পরবর্তীতে সেটি ১৫০ টাকায় বরাদ্দ করা হয়েছে। আবার একই পরিবারে দুইজন শিক্ষার্থী থাকে তাহলে দুইজনই সমান পরিমান টাকা পাবে।
এরপর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৫,০০০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং উচ্চ মাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ৮,০০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশুনা ঠিক মত চালিয়ে যেতে পারে না। সেসব শিক্ষার্থীরা চাইলে উপবৃত্তির মাধ্যমে তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
আশা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন কীভাবে অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করা যায়। অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম ২০২৪ সম্পর্কে ছিলো আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। আমাদের আর্টিকেলের কোথাও না বুঝলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। অনলাইনে উপবৃত্তির আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করুন। আমরা আপনার সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশা-আল্লাহ।
রায়হান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url