লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ
হুন্ডি কি, হুন্ডি ব্যবসা কি হালাল নাকি হারাম জেনে নিন
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল। আমরা লেবু বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকি। পানির সাথে লেবু মিশিয়ে শরবত হিসেবে পান করে থাকি। আবার ভর্তা কিংবা ভাতের সাথে আমরা লেবু খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা লেবুর বেশ কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে। লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। লেবুর উপকারিতা ও লেবুর অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখতে থাকুন।
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ-লেবু নামটি শুনলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে গোল বৃত্তাকার একটি ফল। বাঙ্গালির ভাতের প্লেটে এক টুকরো লেবু না হলে খাওয়াটাই জমে না। এটা ছাড়াও লেবুর অনেক গুন আছে আমরা অনেকে তা জানি না। চলুন আজ জেনে নি লেবুর উপকারিতা এবং উপকারিতা সম্পর্কে।
লেবুর উপকারিতা
- লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এন্টিসেপটিক এর কাজ করে এবং ঠাণ্ডা জাতীয় রোগ প্রতিরোধ করে।
- হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিসিয়ে খেলে পরিপাক প্রক্রিয়া ও লিভারকে সুস্থ রাখে।
- শুকিয়ে যাওয়া লেবুর খোসা অনেক কাজে ব্যবহার করা যায়,গোসল করার সময় লেবুর খোসা গুড়ো করে ব্যবহার করা যায় এতে শরীর ঠান্ডা থাকে। তাছাড়াও এই গুড়ো মাথার ব্যাথা কমতে সাহায্য করে।
- লেবুতে থাকা এন্টিসেপটিক ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে এবং নতুন ব্রণ উঠতেও বাঁধা দেয়। লেবুর রস ব্রণের দাগ এবং ব্রণের উপ মাখিয়ে নিন।
- লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন C ক্যান্সারের কোষ গঠনে প্রতিরোধ করে।
- নিয়মিত লেবু খেলে বুক জ্বালা কমে এবং আলসার দূর করতে সাহায্য করে।
- সকাল বেলা খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেলে পেটের মধ্যে থাকা চর্বি কমে যায় এবং ওজনও কমতে থাকে।
- শরীরের মধ্যে থাকা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, অন্ত্রনালী, যকৃত এবং পুরো শরীরকে পরিষ্কার রাখে লেবু।
- রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে লেবু। তাই নিয়মিত খাওয়ার তালিকায় লেবু রাখুন।
- Trachea (শ্বাসনালীর) এবং গলা ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে শ্বাসনালীর ও গলার প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে।
- বাতের রোগীদের জন্য লেবু ভালো। অনেক উপকার পাওয়া যায়।
লেবুর খোসার উপকারিতা
লেবুর খোসায় আছে পেকটিন নামক উপাদান। এতে আরো রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ফাইবার এবং খনিজ উপাদান। শরীরের মধ্যে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে লেবু। এতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে
ভিটামিন সি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে। লেবুর খোসায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি বিদ্যামান। যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা নিয়মিত লেবু খেতে পারেন। এতে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। শরীরের মধ্যে থাকা ফাইবার বা আঁশ তন্ত্রও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
লেবু খেলে শরীরের মধ্যে থাকা অতিরিক্ত মেদ কমে যায়। আবার লেবুর খোসা খেলে অতিরিক্ত ওজন কমতে থাকে, ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। লেবু হাড়ের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। লেবুর সাহায্যে মুখ বা কনুইয়ের কালো দাগ, বলিরেখা, বার্ধক্যের ছাপ সহজে দূর করা যায়।
লেবু ও গরম পানির উপকারিতা
সকাল বেলা খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানির মধ্যে লেবুর রস দিয়ে খেলে পেটের চর্বি দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে সারাদিন হজমে ঠিক থাকে। দেহের হরমোনকে সক্রিয় রাখে ও উচ্চরক্তচাপ কমায়।
- হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
- ত্বক ভাল রাখতে সাহায্য করে
- মুখের গন্ধ হ্রাস করতে সাহায্য করে
লেবুর শরবতের উপকারিতা
ওজন কমায়: ওজন কমাতে লেবু ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর। অতিরিক্ত ওজন কমাতে ওষুধের চেয়ে লেবুকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। লেবু শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে দেয় না।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: লেবুর ভিটামিন A, C, E, বিটা ক্যারোটিন পাকস্থলী, মলদ্বার, স্তন, প্রোস্টেট, জরায়ু, লিভার, ফুসফুস এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
পিত্তথলির পাথর দূর করে: লেবুর শরবত চর্বিযুক্ত খাবার হজম করতে সাহায্য করে। লেবুর রসে রয়েছে অ্যান্টি-ফ্যাট উপাদান, যা চর্বি হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়া পিত্তথলির পাথর দূর করতে উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার প্রয়োজন। যা লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
ঠান্ডাজনিত রোগ উপশম করে: হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে চায়ের মতো খেতে পারেন। সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা দ্রুত চলে যাবে। তাছাড়া লেবু স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এটি ফুসফুস পরিষ্কার করে এবং হাঁপানি থেকে মুক্তি দেয়।
ক্লান্তি দূর করে: একগ্লাস লেবুর শরবত নিমিষেই ক্লান্তি দূর করে থাকে। তাছাড়া মানসিক চাপ এবং দুশ্চিতা দূর করে লেবু। আপনি যদি কোন কাজে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাহলে নিয়মিত লেবুর শরবত খেতে পারেন। এর ফলে আপনার সকল ধরনের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ নাপাক অবস্থায় যে কাজ গুলো করা যাবে না
লেবু দিয়ে রূপচর্চা
মুখে ব্যবহার: লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ত্বককে সুন্দর রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ত্বকের ক্ষয় দূর করে ও বয়সের চাপ থেকে রক্ষা করে। এবং ত্বককে মসৃণ রাখে, গরম এবং ঘামের কারণে সৃষ্ট তৈলাক্ততা ভাব কমায়। ত্বকের মৃত কোষ এবং তক ফাটা দূর করতে সাহায্য করে লেবু। ত্বক উজ্জ্বল করতে লেবু ব্যবহার করুন। নারকেল জলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান এবং ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি তৈলাক্ত ত্বকে খুব ভালো কাজ করে।
মাথার ত্বকে ব্যবহার: লেবুর অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান মাথার ত্বক পরিষ্কার করে। খুশকি ও রুক্ষতার বিরুদ্ধে কাজ করে। চটচটে ভাব কমায় এবং খুশকি দূর করে। মাথার ত্বক পরিষ্কার করতে লেবুর রসের সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন, এরপর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এটি খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুলের ফলিকলকে মজবুত করবে এবং চুল পড়া কম করবে।
কালচে ভাব দূর করতে: অনেকেরই কালো কনুই ও হাঁটুর সমস্যা থাকে। এই দাগগুলো দূর করতে লেবু ও লবণের মিশ্রণটি এসব জায়গায় লাগাতে পারেন। ভালো ফলাফলের জন্য, সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার আক্রান্ত স্থানে লেবু ও লবণের মিশ্রণ লাগান।
ঠোঁটে ব্যবহার: এমনকি গ্রীষ্মেও ঠোঁট শুষ্ক এবং মলিন হতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে লেবুর রস ও লাল চিনি মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে ঠোঁটে লাগান। লেবু এবং চিনির মিশ্রণ ত্বকের মৃত কোষ দূর করতেও কার্যকর। লেবু ও চিনির মিশ্রণটি ঠোঁটে আলতোভাবে ম্যাসাজ করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
দাঁতে ব্যবহার: দাঁত ঝকঝকে সাদা করতে লেবু দিয়ে তৈরি ‘হোয়াইটেনিং প্যাক’ বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বেকিং সোডা এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং তা দাঁতের ওপরে পাতলা করে প্রলেপ দিয়ে রাখুন। এরপর টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মেজে নিন এবং পানি দিয়ে কুলকুচি করুন । এতে দাঁতের হলুদ ভাব দূর করবে এবং দাঁত ঝকঝক করবে।
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যালোরি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে লেবু মিশিয়ে বিভিন্ন পানীয় পান করলে বাড়তি মেদ থেকে মুক্তি মিলবে। মেদ কমাতে লেবু খাওয়ার উপায় জেনে নিন-
লেবুপানি: একটি লেবু অর্ধেক করে কেটে নিন। এক গ্লাস পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। আপনি দিনের যেকোনো সময় এটি পান করতে পারেন।
লেবু ও মধু: এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে 2 চা চামচ লেবুর রস এবং 1 চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। দ্রুত ওজন কমাতে সকালে খালি পেটে পান করুন।
লেবু ও পুদিনা: এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে ২ চা চামচ লেবুর রস এবং কিছু পুদিনা পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। পানীয়টি প্রতিদিন সকালে পান করুন। স্বাদ বাড়াতে মধু যোগ করতে পারেন।
লেবু ও শসা: লেবু ও শসা টুকরো টুকরো করে এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে পান করুন। শসার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম হজমের সমস্যা দূর করে।
লেবু ও আদা: আদা এবং লেবু-মিশ্রিত পানী নিয়মিত খেলে বাড়তি মেদ দূর হবে।
লেবু চা: আপনি দিনে দুবার লেবু চা পান করতে পারেন। এক কাপ গ্রিন টি এর সাথে ২ চা চামচ লেবুর রস ও সামান্য আদা মিশিয়ে পান করুন। আপনি চাইলে মধু যোগ করতে পারেন।
লেবু মিশ্রিত সালাদ: সবজির সালাদ খাওয়ার আগে একটি আস্ত লেবুর রস নিন। সালাদ আরও পুষ্টিকর হবে।
লেবুর ক্ষতিকর দিক - লেবুর অপকারিতা
যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তারা লেবু এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করতে পারে। কার্বোহাইড্রেট এবং অন্যান্য পুষ্টির অভাবে ওজন কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লেবুর পানীয় পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে তা শরীরে ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত সেবনে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। এটি পেট ফাঁপা সহ বিভিন্ন সমস্যা এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত লেবু ও লেবুর রস খেলে পেটে এবং তলপেটে ব্যথা হতে পারে। লেবুর শরবত বেশি পান করলে কিছুটা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
রায়হান আইটির শেষ কথা
লেবুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। লেবুর উপকারিতা যেমন আছে ঠিক তেমনি লেবুর অপকারিতাও আছে। লেবু অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়া উচিত হবে না আমাদের। পরিমান মতো লেবু খেতে পারলে আমরা তার সুফল পাবো। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে শেয়ার করা চেষ্টা করেছি, লেবুর উপকারিতা, লেবুর খোসার উপকারিতা, লেবু ও গরম পানির উপকারিতা, লেবুর শরবতের উপকারিতা, লেবু দিয়ে রূপচর্চা, লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়, লেবুর অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের কাজে আসবে।
রায়হান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url