এইচআইভি থেকে বাঁচার ২০ টি উপায় সম্পর্কে জেনে নিন
বর্তমান সময়ে এইচআইভি রোগ কম বেশি সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। এইচআইভি একটি মারাত্মক রোগ। যা সংক্রমণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এইচআইভি থেকে বাঁচতে হলে আমাদের অনেক গুলো উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ এইচআইভি এর ফলে আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এইচআইভি মারাত্মক ভাবে সংক্রমণের কারণ আমরা নিজেরাই। আমাদের অসামাজিক চলাফেরার কারণে আমাদের মধ্যে এইচআইভি রোগের আবির্ভাব হচ্ছে। এইচআইভি রোগ নিরাময় করতে না পারলে বা এইচআইভি থেকে বাঁচার উপায় না জানলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে তোলে ধরার চেষ্টা করবো এইচআইভি কি, এইচআইভি কেনো হয়, এইচআইভি হওয়ার কারণ এবং এইচআইভি থেকে বাঁচার ২০ টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
আরো পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ
এইচআইভি কি - এইচআইভি বলতে কি বুঝায়
এইচআইভি একটি সংক্রামিত রোগ। এইচআইভি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে আমাদের অসামাজিক চলাফেরার কারণে। এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ যা এক ব্যাক্তি থেকে অন্য ব্যাক্তি শরীরে প্রবেশ করে থাকে। এইচআইভি জীবানু এর মাধ্যমে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে প্রবেশ করে থাকে। এই জীবাণু প্রবেশ একমাত্র মাধ্যম হলো শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া। আমাদের সমাজে বর্তমানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অধিকাংশ নারী ও পুরুষ। তাদের মধ্যে এইচআইভি সচেতনতা সম্পর্কে জানা না থাকার ফলে তাদের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পরে। HIV এর পূর্ণরূপ কি সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। HIV এর পূর্ণরূপ হলো Human Immunodeficiency Virus যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এইচআইভি এর লক্ষ্মণ সমূহ কি কি
আমরা অনেকেই জানি না এইচআইভি হওয়ার লক্ষ্মণ সমূহ কি কি বা কিভাবে বুঝা যাবে একজন ব্যাক্তি এইচআইভি জনিত সমস্যা হয়েছে। এইসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের পোস্টের এই অংশ। এইচআইভি লক্ষ্মণ কি কি এইসব বিষয়ে না জানলে আমরা না জেনেই এই রোগ নিয়ে ঘুরতে হবে। পরিশেষে আমাদের মৃত্যুর মাধ্যমে জীবন শেষ করতে হবে।
সাধারণত প্রাথমিক ভাবে বুঝার কোন উপায় নেই যে আপনার এইচআইভি বা এইচআইভির জীবাণু আক্রমন করেছে৷ তবে কয়েকটি উপায় সম্পর্কে জানলে আমরা এইচআইভি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাবো এবং পরবর্তীতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
অনেকে জানতে চেয়েছেন এইচআইভি এর লক্ষ্মণ সমূহ কি কি বা এইচআইভি হলে কিভাবে বুঝবো। কোন কিছু নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হবে, ঘন ঘন গলা শুকিয়ে যাবে, আপনার ঘুমের সময় ঘামাতে থাকবেন যার কারণে ঘুম আসবে না এইগুলোই হলো এইচআইভি এর সাধারণ লক্ষ্মণ সমূহ। এই লক্ষ্ণ গুলো দেখতে পেলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
এইচআইভি থেকে বাঁচার ২০ টি উপায়
একবার যদি আপনি এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াও আমাদের দেওয়া উপায় গুলো মেনে চললে আপনি এইচআইভি থেকে বাঁচতে পারবেন। আমাদের পোস্টের উপরের অংশে এইচআইভির লক্ষন সমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। এইচআইভি থেকে বাঁচার জন্য নিচের নিয়ম গুলো যথাযথ ভাবে মেনে চলবেন। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক এইচআইভি থেকে বাঁচার ২০ টি উপায় সম্পর্কে।
- নিরাপদ ভাবে যৌন মিলন করতে হবে।
- এইচআইভি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
- এইচআইভি আক্রান্ত এমন কোন ব্যাক্তির সাথে যৌন মিল করা যাবে না বা মেলামেশা করা যাবে না।
- অন্যের ব্যবহার করা সিরিঞ্জ ব্যবহার করা যাবে না। দেখে নিবেন সিরিঞ্জ অন্য কেও ব্যবহার করছে কিনা।
- সহবাসের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করবেন।
- ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে।
- রক্ত গ্রহনের আগে অবশ্যই রক্তদাতার এইচআইভি পরিক্ষা করে নিতে হবে।
- বহুগামিতা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন।
- এইচআইভি আক্রান্ত এমন ব্যক্তির ব্যবহার করা কোন জিনিস আপনি ব্যবহার করবেন না।
- সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাত চেষ্টা করবেন।
- জন্মদাতা মায়ের এইচআইভি থাকলে মায়ের দুধ পান করাবেন না।
- এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড়-চোপড় ব্যবহার করবেন না।
- সহবাসের সময় নারী বা পুরুষের লিঙ্গে থুথু ব্যবহার করবেন।
- এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্লেড ব্যবহার করা যাবে না অথবা অন্যের ব্যবহার করা ব্লেডও ব্যবহার করবেন না।
- সব সময় হাত পরিষ্কার রাখবেন। বাহির থেকে আসলে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন।
- আপনার বাড়ির আশপাশের ময়লা আবর্জনা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করুন।
- বাহির গেলে বা কারো থেকে দেখা করতে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
- এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা থালাবাসনে কোন কিছু খাবেন না।
- কাজ করার সময় হাতে গ্লাভস পরিধান করুন।
- এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত অন্য কোন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো যাবে না।
আশা করি আপনারা এইচআইভি থেকে বাঁচার ২০ টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। এইগুলো ছাড়াও আরো অনেক উপায় আছে যেগুলো বলা যায়নি। তবে চেষ্টা করবেন সব নিয়ম গুলো মেনে চলার জন্য। নিজেকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিয়ম মেনে চলতে পারলে আপনার এইচআইভি হওয়ার সম্ভাবনা একদম শুন্যতে নেমে আসবে।
আরো পড়ুনঃ নাপাক অবস্থায় যে কাজ গুলো করা যাবে না
মহিলাদের এইচআইভি লক্ষন বোঝার উপায়
আমরা ইতিমধ্যেই এইচআইভি হওয়ার লক্ষণ সমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে সব ক্ষেত্রে পুরুষ বা মহিলাদের একইরকম লক্ষণ দেখা যায় না। মহিলা এবং পুরুষদের এইচআইভির লক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনি যদি একজন মহিলা হয়ে থাকে এবং উপরে উল্লেখ করা লক্ষণ সমূহের মাধ্যমে বুঝতে না পারেন তাহলে এইখান থেকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে জানতে পারবেন। মহিলাদের কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়ে থাকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলা উভয় এর একইরকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
মহিলাদের এইচআইভি লক্ষন বোঝার উপায় গুলো হলো, পিরিয়ডের সময় সমস্যা দেখা দেওয়া, লিস্ফ গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, পাকস্থলীতে ঘন ঘন ব্যাথা অনূভুতি হওয়া, হঠাৎ করে ওজন কমতে থাকা, ঘন ঘন জ্বর হবে, সারাদিন ঘুম হওয়া এবং পেটে ব্যাথা অনূভুতি হওয়া।
পুরুষের এইচআইভি লক্ষন বোঝার উপায়
পুরুষদের এইচআইভি হওয়ার বেশ কিছু লক্ষন দেখা যায়। আমরা ইতিমধ্যেই আপনাদের অনেক উপায় সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। মহিলাদের এইচআইভি লক্ষন বোঝার উপায় সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পুরুষের এইচআইভি লক্ষন বোঝার বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে যেগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার এইচআইভি জনিত সমস্যা হয়েছে।
পুরুষদের এইচআইভি হওয়ার লক্ষণ গুলো হলো, শরীরের ক্লান্তি বেড়ে যাওয়া, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাথা করা, অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমা হওয়া এর ফলে কোন কাজে মন না বসা, শরীরের মধ্যে লাল লাল ফুসকুড়ি হওয়া, মাথা ব্যাথা হওয়া ইত্যাদি কারণ গুলো দেখলে অবশ্যই এইচআইভি এর জন্য রক্ত পরিক্ষা করতে দিবেন।
এইডস কতদিন পর ধরা পড়ে
এইডস অনেক ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে আবার অনেক ক্ষেত্র দেরিতে ধরা পড়ে। তাই নির্দিষ্ট করে বলা যায় না এইডস কতদিন পর ধরা পড়ে। তবে এইখানে যা বলা হবে না অনুমান মাত্র। তবে এইডস এর সন্দেহ হলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। এইডস সাধারণ ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে তাফ প্রাথমিক লক্ষন গুলো দেখা দিতে পারে। যদি এর চিকিৎসা না করেন তাহলে এইটা তার ভয়াবহ রুপ দেখিয়ে দিবে।
আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন এইডস সাধারণত কতদিন পর তার প্রাথমিক লক্ষন গুলো প্রকাশ করে। আমাদের দেওয়া লক্ষ্ণ গুলো যদি দেখা দেয় এবং ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে এই লক্ষ্ণ গুলোর প্রভাব বেড়ে যায় তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মমে রাখবেন এইটা অনুমান মাত্র, তবে বেশিরভাগ সময় ২ থেকে ৩ মাস এর মধ্যে এই লক্ষন গুলো বেড়ে যায়।
এইচআইভি এর পরিক্ষা সমূহ
এইচআইভি বা এইডস এর পরিক্ষা সাধারণত ৩ (তিন) ভাবে করা হয়ে থাকে। প্রথমত আপনার মুখের থুতু বা মুখের লালার মাধ্যমে, রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমে এবং মুত্র বা পশ্রাব এর মাধ্যমে। এই তিনটি পরিক্ষার মাধ্যমে যদি সব গুলোতে এইচআইভি বা এইডস এর জীবাণু শনাক্ত হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার এইচআইভি বা এইডস হয়েছে।
এইচআইভি বা এইডস পরিক্ষা করার জন্য প্রথমে আপনার নিকটস্থ কোন হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। এরপর সেখানে ডাক্তারের কাছে আপনার লক্ষ্ণ সমূহের কথা বলবেন। পরবর্তীতে ডাক্তার আপনাকে তিনটি পরিক্ষা করত্র বলবেন তারমধ্য একটি হলো থুতু বা লালা পরিক্ষা, রক্ত পরিক্ষা এবং মুত্র বা পশ্রাব পরিক্ষা। এইগুলো করার পর যখন রিপোর্ট দিবে তখন ডাক্তার রিপোর্ট দেখে আপনার অবস্থা জানাতে পারবেন। সব গুলোর মধ্যে যদি এইচআইভি এর জীবাণু থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার এইডস বা এইচআইভি হয়েছে।
এইচআইভি এর চিকিৎসা পদ্ধতি সমূহ কি। এইচআইভি এর চিকিৎসা অতীতের তুলনায় বর্তমানে অনেক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এইচআইভি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের সরকাত যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতি করার চেষ্টা করতেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠতেছে। যাদের এইচআইভি রোগ বেশি পরিমানে হয়ে যায় তাদের চিকিৎসা করানো একটু কষ্টসাধ্য।
এইচআইভি রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে তাকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করানো। হাসপাতালে ভর্তি থেকে সেখান থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। তবে বর্তমানে বাড়িতে বসেও চিকিৎসা করা যায়। আমাদের দেওয়া নিয়ম গুলো বাড়িতে মেনে চললে তাহলে খুব দ্রুত এইচআইভি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
রায়হান আইটির শেষ কথা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আশা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এইচআইভি থেকে বাঁচার ২০ টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। আমাদের সাইটের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য তুলে ধরার মাধ্যমে আপনাদেরকে সাহায্য করে থাকি। এইচআইভি থেকে বাঁচার জন্য আমাদের দেওয়া উপায় গুলো মেনে চলুন এবং কোন ধরনের এইচআইভি এর লক্ষন দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এইচআইভি হয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য আপনাকে ৩ টি টেস্ট করাতে হবে যেমন, থুতু বা লালা পরিক্ষা, রক্ত পরিক্ষা, মূত্র বা পশ্রাব টেস্ট করতে হবে।
রায়হান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url