ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় - ফরজ গোসলের নিয়ম
আমাদের মধ্যে অনেকেই জানি না ফরজ গোসল কেনো করা হয় এবং ফরজ গোসল করার নিয়ম সম্পর্কে। আমরা এইটা ও জানি না যে ফরজ গোসল না করলে আমাদের কি কি ক্ষতি হয়।আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই বিষয় গুলো জানার চেষ্টা করবো। যারা এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ুন।
একজন মানুষ বিভিন্ন কারণে নাপাক হয়ে যেতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হলো যৌন মিলন করার মাধ্যমে এবং বীর্য নীর্গত হওয়ার মাধ্যমে। বীর্যপাত আমাদের ঘুমন্ত বা জেগে থাকা অবস্থায়ও হতে পারে, ইচ্ছা বা অনিচ্ছাই আমাদের এই বীর্য পাত নীর্গত হয়ে থাকে। এই অবস্থায় আমাদের গোসল করা ফরজ হয়ে যায়। এইখানে প্রশ্ন হলো ফরজ গোসল কী? তাহলে চলুন নিচে জেনে নেওয়া যাক ফরজ গোসল সম্পর্কে।
ফরজ গোসল কয় প্রকার?
এখন আমরা জানবো ফরজ গোসল কয় প্রকার ও কী কী এই সম্পর্কে। আমরা বিভিন্নভাবে নাপাক হয়ে যায়। যার কারনে আমাদেরকে ফরজ গোসল করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেসব কারণে আমরা নাপাক হয় তার জন্য ফরজ গোসলের কিছু প্রকার আছে। ফরজ গোসল সাধারণত ০৭ (সাত) প্রকার। এর মধ্যে আমরা যদি কোনভাবে নাপাক হয়ে যায় তাহলে আমাদের ফরজ গোসল করতে হবে। তাহলে নিচে দেওয়া হলো-
- স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে অথবা পুরুষের স্বপ্নদোষ হলে।
- নারীদের ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড হলে।
- সন্তান প্রসবের পর রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পর।
- মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পর
- মৃত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে।
- কোনো অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে।
- কোন কিছুর মানত বা শপত করার পর ফরজ গোসল করতে হয়
আশা করি বুঝতে পেরেছেন ফরজ গোসল করার কারন গুলো সম্পর্কে। এই গুলোর কোন একটি হলে আপনাকে অবশ্যই ফরজ গোসল করতে হবে।
ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয়
আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে আমরা জানবো ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয়। আমাদের সবাই মনে প্রশ্ন আসে ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয়? পবিত্রতা হলো ঈমানের একটা অঙ্গ। আল্লাহ তায়ালা নিজে আমাদের সবাইকে পাক-পবিত্র থাকতে বলেছেন। পবিত্রতা বলতে আমরা বুঝি শুধু মাত্র শরীরকে বুঝিয়ে থাকে। আমাদেকের অবশ্যই শরীর এবং মন দুইটাকেই পবিত্র রাখতে হবে। আমাদের জানার বিষয় হচ্ছে শারীরিকভাবে পবিত্র থাকার বিষয়ে। তাহলে চলুন নিচে জেনে নেওয়া যাক ফরজ গোসল না করলে আমাদের কি কি ক্ষতি হতে পারে-
শুরুতে আমরা জেনেছিলা ফরজ গোসল কখন করতে হয়, অর্থ্যাৎ আমাদের কি কি কারণে ফরজ গোসল করার প্রয়োজন হয়। উপরে উল্ল্যেখ করা যেকোন একটি যদি আপনার হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে ফরজ গসল করতে হবে। ফরজ গোসল না করলে আমরা আল্লাহর ইবাদত করতে পারবো না, নামাজ পড়তে পারবো না, কোর-আন তেলাওয়াত করতে পারবেন না। আপনি যদি নাপাক অবস্থায় আল্লাহর প্রধান ইবাদাত গুলো করেন তাহলে আপনার কবিরা গুনাহ হবে।
কবিরা গুনাহ সব থেকে বড় গুনাহ। কবিরা গুনাহ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। কিয়ামতের মাঠে আপনাকে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হতে হবে। আল্লাহর দেখানো পথে না চললে সে শাস্তি আপনাকে আখিরাতে পেতে হবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয়।
ফরজ গোসলের নিয়ত
এখন আমরা জানবো ফরজ গোসলের নিয়ত সম্পর্কে। আমরা অনেকে ফরজ গোসলের নিয়ত খুজে থাকি অথবা আমাদের জানা থাকলেও আমরা ভুলে যায়। আমরা যখন ফরজ গোসল করি তখন আমাদের নিয়ত করা লাগে। তাহলে চলুন ফরজ গোসলের নিয়ত কী সেটা জেনে নেওয়া যাক।
বাংলা উচ্চারণঃ “নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি”
অর্থঃ “আমি নাপাক থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি”
আমরা যারা আরবি উচ্চারণ জানি না তারা চাইলে বাংলাতেই এই নিয়ত করতে পারবো। আমরা যারা বাংলাতে উচ্চারণ করব তারা শুধু বলবো, "হে আল্লাহ, আমি পাক-পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করছি" এইটা বললেও আপনার নিয়ত হইয়ে যাবে।
ফরজ গোসল করার নিয়ম
এখন আমরা জানবো ফরজ গোসল করার নিয়ম সম্পর্কে। আমরা যদি ফরজ গোসল করার নিয়ম সম্পর্কে না জেনে গোসল করি তাহলে আমাদের গোসল হবে না। আমাদের গোসল সম্পূর্ণ করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই নিয়ম মেনে ফরজ গোসল করতে হবে। ফরজ গোসল করার সময় পর্যাপ্ত পরিমানে পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। ফরজ গোসল করার আগে ওযু করা সুন্নত। শরীরের সম্পূর্ণ ভালোভাবে ধৌত করতে হবে, সাথে গোপনাঙ্গ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শরীরের কোন অংশ না ভিজলে আপনার ফরজ গোসল হবে না। আপনি যদি নাক, কান, মুখ এবং চোখ ইত্যাদি ধুতে ভুলে যান তবে সেগুলিও ধুয়ে ফেলতে হবে। ফরজ গোসল করার সময় পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে। নোংরা বা অপরিষ্কার পানি দিয়ে ফরজ গোসল হবে না।
যে পানি দিয়ে ফরজ গোসল করা যাবেনাঃ
- অপরিচ্ছন্ন অথবা অপবিত্র পানি দিয়ে
- ফল বা গাছ হতে নিসৃতঃ পানি দিয়ে
- যে পানির মধ্যে কোন কিছু মিশানোর ফলে যে বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ এবং গারত্ব এর পরিবর্তন হয়েছে
- মূত্র, রক্ত, মল বা মদ ইত্যাদি খারাপ জিনিজ মেশানো পানি দিয়ে
- অযু অথবা গোসলের পানি দিয়ে
- অপবিত্র বা হারাম প্রাণী, যেমনঃ শূকর, কুকুর ও আন্যান্য হিংস্র প্রাণীর পানকৃত আবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করা যাবেনা
ফরজ গোসলের ওয়াজিব কাজ
- সম্পূর্ণ মুখ না ভিজা পর্যন্ত পানি দেওয়া
- সম্পূর্ন নাক ভালোভাবে ধুতো করতে হবে
- শরীর ভালোভাবে ধুতে হবে। শরীরের কোন অংশ যেন বাদ না যায়
- হাত দিয়ে ঘষে পুরো শরীর ভিজিয়ে নিন
ফরজ গোসল ব্যাতীত যে কাজ গুলো করা যাবে নাঃ-
- ফরজ গোসল করা ছাড়া আপনি দোয়া করতে পারবেন না
- কুরআন শরীফ স্পর্শ করা বা কুরআন শরীফের কোন আয়াত পরা যাবে না
- পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করা যাবে না
- প্রয়োজন ছাড়া মসজিদে প্রবেশ করবেন না।
মেয়েদের মাসিকের পর কী ফরজ গোসল করতে হয়?
সবার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, মেয়েদের মাসিকের পর কী ফরজ গোসল করার প্রয়োজন হবে কিনা। আসলে এর উত্তর হলো, হ্যাঁ করতে হবে। মহিলাদের ফরজ গোসল করার কয়েকটি নিয়েম আছে।
মেয়েদের মাসিকের পর ফরজ গোসল করা
- প্রথমে আপনার শরীরের কাপড় সম্পূর্ণ খুলে ফেলুন অথবা প্রসাধণী কাপড় থাকলেও সমস্যা নাই।
- এরপর শরীরে পানি ঢালুন। এমন ভাবে পানি ঢালবেন যেনো শরীরের কোন অংশ শুকনো না থাকে
- এরপর আপনার শরীর ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন। এরপর পুনরায় আবার শরীরে পানি ঢালবেন।
- আপনার শরীরের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছেছে কিনা সেটি নিশ্চিত করুন। আপনার চুল ভালোভাবে পানি দিবেন যাতে আপনার মাথার ত্বক ভালোভাবে ভিজে যায়।
মাসিকের পর সুন্নত আমলের সাথে সম্পূর্ণ গোসল করা
- ফরজ গোসলের আগে প্রথমে অযু করে নিবেন।
- "বিসমিল্লাহ" বলে তিনবার আপনার হাত ভাল করে ধুয়ে ফেলুন
- আপনার বাম হাত দিয়ে, আপনার গোপনাঙ্গ ধুয়ে ফেলুন। শরীরের সমস্ত অংশ পানি দিয়ে ঘষুন বিশেষ করে আপনার মাসিকের পরে গোপনীয় অংশগুলি।
- শরীরের গন্ধ দূর করতে সাবান বা অন্য প্রসাধনী ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনার মাথায় ভালোভাবে পানি ঢালুন যাতে করে আপনার মাথার ত্বক ভালোভাবে ভিজে যায়।
- সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করতে আপনার হাত ব্যবহার করুন
আমাদের শেষ কথা
আমাদের আজকের আর্টিকেলের একদম শেষ পর্যায়ে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ফরজ গোসলের নিয়ম সম্পর্কে। ফরজ গোসল না করলে আমাদের যে যে ক্ষতি বা ফরজ গোসল না করলে আমরা কোন কাজ গুলো করতে পারবো না সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
রায়হান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url