ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা-নন সেনজেন ভুক্ত দেশ
ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা এবং নন সেনজেন ভুক্ত দেশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আমাদের আজকের এই পোস্টে। আমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশ গুলোর তালিকা। কোন কোন দেশ গুলো ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকার মধ্যে পরে তার তালিকা জানতে পারবেন।
ইউরোপের এক দেশ থেকে অন্য দেশের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেনজেন ভুক্ত দেশ গুলো চুক্তিবদ্ধ হয়। এই চুক্তির আওতায় যে দেশ গুলো আছে সে গুলোকে সেনজেন ভুক্ত দেশ বলা হয়। আর যে দেশ গুলো চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেনি তাদেরকে নন সেনজেন ভুক্ত দেশ বলা হয়।
ভূমিকা
ইউরোপের যে দেশ গুলো সেনজেন ভুক্ত যেগুলোতে অনেক ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হলো এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরতে যাওয়া। আমরা যারা ঘুরতে পছন্দ করি তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট অনেক সাহায্য করবে আপনার ঘুরতে যাওয়ার মূহুর্তকে। যেসব দেশ নন সেনজেন ভুক্ত সেসব দেশে ঘুরতে গেলে আমাদের অনেক ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হতে পারে। যেসব দেশ চুক্তির মাধ্যমে সেনজেন ভুক্ত দেশের রুপান্তর হয়েছে সেসব দেশে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা ও নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা তুলে ধরা হবে। বিস্তারিত ভাবে দেখলে বুঝতে পারবেন।
সেনজেন অর্থ কি
সেনজেন ভুক্ত দেশ গুলো বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে। ইউরোপের দেশ গুলো একত্রিত হয়ে যে চুক্তি স্বাক্ষর এর মাধ্যমে সেনজেন এর আওতায় আসে। এই সেনজেন এর মূল কাজ ছিলো ইউরোপের দেশ গুলোর মধ্যে একটা সেতুবন্ধন সৃষ্টি করা। যাতে করে সেসব দেশ গুলো থেকে মানুষ বিনা কষ্টে ভ্রমণ এবং অন্যান্য যাবতীয় কাজ সম্পাদনা করতে পারে। যেসব দেশ সেনজেন চুক্তির আওতায় সেসব দেশ নিজেদের মধ্যে সহজে ভ্রমণ করতে পারবে। এই সেনজেন চুক্তিটি গঠন করা হয় ১৯৯৫ সালে এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় লুক্সেমবার্গ শহরের সেনজেন নগরে।
এই চুক্তিতে ইউরোপের সব দেশ স্বাক্ষর করেনি, কিছু দেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলো এবং কিছু দেশ এই চুক্তি থেকে সরে যায়। যেসব দেশ এই চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিলো তাদেরকে বলা হয় নন সেনজেন ভুক্ত দেশ।
সেনজেন দেশের সুবিধা কি
যেসব দেশ সেনজেন চুক্তির আওতায় পড়েছে তাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এক দেশ থেকে অন্য দেশে সহজে ভ্রমণ করা যায়। আমাদের আজকের পোস্টের আলোচনার বিষয় হচ্ছে সেনজেন ভুক্ত দেশ এবং নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কিত। শুরুতে ইউরোপের মোট ২৬ টি দেশ এই চুক্তির আওতায় ছিলো। তবে পরবর্তীতে ২০২৩ সালে নতুন আরো একটি দেশ সেনজেন চুক্তির আওতায় আসে। বর্তমানে ইউরোপের মোট ২৭ টি দেশ সেনজেন চুক্তি আওতায়।
আপনার কাছে যদি যেকোন একটি সেনজেন ভুক্ত দেশের পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে আপনি সেসব দেশে সহজে ভ্রমণ করতে পারবেন। ভ্রমন করার পর আপনি সে দেশে ৯০ দিন অর্থ্যাৎ ৩ মাস পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। আপনি ভ্রমণ বা ব্যবসায়ের কাজে গেলে সেখানে ৯০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। তবে আপনি চাইলেও ৯০ দিনের বেশি অবস্থান করতে পারবেন না। আপনি যদি ৯০ দিনের বেশি অবস্থান করেন তাহলে আপনি তখন অবৈধ হয়ে যাবেন।
ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা
বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক মানুষ স্টুডেন্ট ভিসা বা কাজের ভিসা নিয়ে ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছে। আবার অনেকে সেখানে চিরস্থায়ী আবাস গড়ে তুলতেছে। আবার কেউ চিন্তা করতেছেন ইউরোপের যেকোন দেশে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার করবেন। অনেকে জানতে চেয়েছেন ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা গুলো কি কি। তাদের জন্য আমাদের আজকের এই পোস্ট। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা।
- Romania (রোমানিয়া)
- Poland (পোল্যান্ড)
- Bulgaria (বুলগেরিয়া)
- Serbia (সার্বিয়া)
- Cyprus (সাইপ্রাস)
- Albania (আলবানিয়া)
- Ireland (আয়ারল্যান্ড)
- Bosnia and Herzegovina (বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা)
- Montenegro (মন্টিনেগ্রো)
- Moldova (মলদোভা)
- Belarus (বেলারুশ)
- Macedonia (মেসোডোনিয়া)
- Ukraine (ইউক্রেন)
- Armenia (আর্মেনিয়া)
- Azerbaijan (আজারবাইজান)
- Georgia (জর্জিয়া)
- Kosovo (কসোভো)
- Monaco (মোনাকো)
- Russia (রাশিয়া)
- San Marino (সেন মারিনু)
- Turkey (তুর্কি)
উপরে উল্লেখিত দেশ গুলো হচ্ছে নন সেনজেন ভুক্ত দেশ। এই দেশ গুলো ১৯৯৫ সালে লুক্সেমবার্গ শহরের সেনজেন নগরে যে চুক্তি হয়েছিলো সেখানে স্বাক্ষর করেনি। আপনি যদি এই দেশ গুলোতে ভ্রমন বা অন্য কাজে যেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে প্রত্যেকটা দেশের জন্য আলাদা আলাদা পাসপোর্ট এবং ভিসা নেওয়ার প্রয়োজন হবে। কারণ নন সেনজেন দেশ গুলোতে ভিসা বা পাসপোর্ট ব্যাতিত আপনি সে দেশে ঢুকতে পারবেন না।
সেনজেন ভুক্ত দেশ কয়টি | সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা
বর্তমানে ইউরোপের মোট ২৭ টি দেশ সেনজেন ভুক্ত দেশের আওতায় আছে। সেনজেন ভুক্ত দেশ বলতে কি বুঝায় বা সেনজেন অর্থ কি এইসব সম্পর্কে আমরা উপরে আলোচনা করেছি। সেনজেন ভুক্ত দেশ গুলো একটা চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সীমানার জটিলতা দূর করে থাকে। সেনজেন ভুক্ত দেশের মানুষরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে এক দেশ থেকে অন্য দেশে সহজে ভ্রমণ করতে পারে। তাদের নিজেদের মধ্যে একটা মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়।
যেনো এক দেশের মানুষ অন্য দেশে সহজে ভ্রমণ করতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ইউরোপের কোন দেশ গুলো সেনজেন ভুক্ত দেশের আওতায়। নিচে সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা দেওয়া হলো
- Austria
- Portugal
- Germany
- Czech Republic
- Poland
- Italy
- Luxemburg
- Estonia
- Latvia
- Spain
- Lithuania
- Finland
- Slovenia
- Denmark
- Hungary
- Malta
- Switzerland
- Belgium
- France
- Liechtenstein
- Greece
- Sweden
- Norway
- Netherlands
- Croatia
সেনজেন ভুক্ত সর্বশেষ দেশ
১৯৯৫ সালে যখন সেনজেন চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় তখন মোট দেশের সংখ্যা ছিল ২৬ টি। কিন্তু বর্তমানে এই ২০২৩ সালে আরো একটি দেশ ভাবে সেনজেন ভুক্ত দেশের আওতায় আসে। নতুন করে সেনজেনভুক্ত দেশের আওতায় আসা দেশটির নাম হলো ক্রোয়েশিয়া (Croatia)। ক্রোয়েশিয়া (Croatia) সেনজেন ভুক্ত দেশের মধ্যে সর্বশেষ দেশ হিসেবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বর্তমানে ২৭ টি সেনজেন ভুক্ত দেশ রয়েছে। অর্থাৎ সেনজেনভুক্ত দেশ হল মোট ২৭ টি।
সেনজেন ভিসা কি
সহজ ভাষায় বলতে গেলে সেনজেন ভিসা বলতে বুঝায় কোন একটি সেনজেনভুক্ত দেশের পাসপোর্ট দিয়ে অন্যান্য সব সেনজেন ভুক্ত দেশে যেকোনো যেমন ভ্রমণ বা ব্যবসায়িক কাজে সহজে যাতায়াত করা যায়। আপনার কাছে যদি কোন একটি সেনজেনভুক্ত দেশের পাসপোর্ট থেকে থাকে বা ভিসা থাকে তাহলে আপনি তা দিয়ে আরো ২৬ টি সেনজেন ভুক্ত দেশে খুব সহজে যাতায়াত করতে পারবেন।
তবে মনে রাখতে হবে আপনি সেখানে তিন মাস অর্থাৎ ৯০ দিনের বেশি অবস্থান করতে পারবেন না। আপনার ভিসার মেয়াদ যদি ৯০ দিনের বেশি হয়ে যায় তাহলে আপনি অবৈধ হয়ে যাবেন।
সেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায়
সেনজেন ভুক্ত যেকোন দেশে ভ্রমন বা অন্য কাজে যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে একটা সেনজেন ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। সেনজেন ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে অনলাইন এর মাধ্যমে ফরম পূরণ করতে হবে। অনলাইনে ফরম পূরণ করার জন্য প্রথমে আপনাকে গুগলে সার্চ করতে হবে Schengen Visa Application Form লিখে। এরপর আপনার কাঙ্ক্ষিত সাইট পেয়ে যাবেন।
এরপর অনলাইন থেকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করে নিবেন। যেসব তথ্য দিতে বলবে সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে পূরণ করবেন। আবেদনের সকল ঘর ভালোভাবে পূরণ করতে হবে। এরপর সব পূরণ করার পর ফরমটির জেরক্স কপি ডাউনলোড করে নিবেন। অবশ্যই আপনার ফরম এর মধ্যে আপনার স্বাক্ষর ও তারিখ উল্লেখ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে সেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায়
বাংলাদেশের মধ্যে অনেকেই ইউরোপে যে কোন একটি দেশে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক। সাধারণত ইউরোপে সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্য থেকে একটি দেশের ভিসা পেলে বাকি দেশগুলো অর্থাৎ বাকি ২৬ টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ বা ব্যবসায়িক কাজে সহজে যাওয়া যায়। বাংলাদেশ থেকে সেনজেন ভিসা পাওয়ার জন্য প্রথমে বাংলাদেশে অবস্থান করা যেকোনো সেনজেন ভুক্ত দেশের দূতাবাস যোগ করতে হবে। এরপর সেনজেন ভুক্ত দেশে দূতাবাস থেকে আপনার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে শুধুমাত্র সেনজেন ভুক্ত দেশগুলোর দূতাবাস থেকে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। কারণ ইউরোপ ২৭ টি দেশ ছাড়া অন্যান্য দেশগুলো সেনজেনভুক্ত দেশের আওতায় পড়ে না। তাই আবেদন করার সময় কেন রাখতে হবে যে দূতাবাসটি যেন সেনজেনভুক্ত যেকোনো দেশের দূতাবাস হয়।
সেনজেন ভিসার খরচ
নিচে সেনজেন ভিসাএ খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:-
- প্রাপ্ত বয়ষ্ক ব্যাক্তির প্রথম আবেদন- ৮০ ইউরো ডলার
- ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুর প্রথম আবেদন- ৪০ ইউরো ডলার
- ০ থেকে ৫ বছরের শিশুর প্রথম আবেদন- আবেদন করার সময় কোন টাকার প্রয়োজন হয় না
রায়হান আইটির মতামত
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আশা করি আমাদের আজকের এই পোস্ট আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের এই পোস্টে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কে। নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা আরো আলোচনা করেছি সেনজেন ভিসা কি, কিভাবে সেনজেন ভিসা পাওয়া যায়, বাংলাদেশ থেকে সেনজেন ভিসা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে। আজকের এই পোস্ট নিয়ে আপনাদের কোন মতামত থাকলে তা আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারবেন। আল্লাহ হাফেজ।
রায়হান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url